দ্যা বেঙ্গল ট্রিবিউন: জগন্নাথদেবের লৌকিক দৃশ্যমান হাত নেই, কিন্তু তিনি সকল দ্রব্যই গ্রহণ করেন। তেমনি তাঁর দৃশ্যমান পাও নেই, কিন্তু তিনি সর্বত্রই বিরাজমান। ব্রহ্মের স্বরূপ সম্পর্কে বেদে বলা হয়েছে, তাঁর হাত না থাকলেও, তিনি সবকিছুই ধারণ করেন। তাঁর পা না থাকলেও, তিনি সর্বত্র যেতে পারেন। তাঁর চোখ নেই, তবু তিনি জগতের সকল কিছুই দেখতে পান। তাঁর কান নেই, তবু তিনি সব শুনতে পান। যা কিছু জানবার, তা তিনি জানেন যদিও তাঁকে কেউ জানে না।
অপাণিপাদো জবনো গ্রহীতা
পশ্যত্যচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্ণঃ।
স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা
তমাহুরগ্রং পুরুষং মহান্তম্ ॥
(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ:৩.১৯)
“তাঁর হাত নেই, তবু তিনি সবকিছু ধারণ করেন; তাঁর পা নেই, তবু তিনি দূরে যেতে পারেন। তাঁর চোখ নেই, তবু তিনি সব দেখতে পান। তাঁর কান নেই, তবু তিনি সব শুনতে পান। যা কিছু জানবার, তা তিনি জানেন যদিও তাঁকে কেউ জানে না। যাঁরা পরমাত্মাকে জানেন, তাঁরা বলেন—তিনিই সকলের অগ্রণী এবং তিনি সর্বব্যাপী।”
জগতের আদিপুরুষ বিশ্বাত্মা পরমেশ্বরের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তাঁর রূপ নেই, আকার নেই। তিনি চিন্তার অতীত। বাক্য মনের অতীত। তিনি অচিন্ত্য, তাই তাঁর সম্পূর্ণ বিগ্রহ তৈরি করা আদৌ সম্ভব নয়, শুধু ভক্ত আকাঙ্ক্ষায় অসম্পূর্ণ দারুব্রহ্ম প্রতীকে তিনি প্রকাশিত।জগন্নাথদেবের কৃপাঘন, গোলাকার চখা-চখা কমল নয়ন এবং অসম্পূর্ণ বিগ্রহ দেখে, আমরা না বুঝে নিজেদের অজ্ঞানতায় অনেক সময়ই জগন্নাথকে উদ্দেশ্য করে বলে ফেলি-“ঠুঁটো জগন্নাথ”। জগন্নাথের হাত-পা নেই, তাই সে ঠুঁটো জগন্নাথ। কথাটি বলতে বলতে আমরা তা বাংলা প্রবাদবাক্যই বানিয়ে ফেলেছি। জগন্নাথের প্রতি না বুঝে তুচ্ছার্থে প্রতিনিয়ত ব্যবহারও করে ফেলি কথাবার্তায়। হয়ত আমরা একবার ভেবেও দেখিনি বাক্যটির অর্থ কি হতে পারে। যিনি সর্বব্যাপী পরমেশ্বর তাকেই বলছি ঠুঁটো! বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমাদের প্রচলিত ঠুঁটো জগন্নাথ বাক্যের স্থানে ব্যবহার করা উচিৎ, সর্বব্যাপী জগন্নাথ। তাহলেই ভাবটি শুদ্ধ হয়, সুন্দর হয়।