আজ থেকে ১০ বছর আগে ২০১২ সালে, অত্যন্ত ইন্টারেস্টিং একটি বিষয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে পাব্লিশ করা হয়। একটি হারিয়ে যাওয়া গাছের প্রজাতিকে করা হয় পুনরুজ্জীবিত, অতীত থেকে ফিরিয়ে আনা হয় বর্তমানে। এই অভূতপূর্ব ঘটনাটি প্রমাণ করে অনেককিছু যেমন গাছের যে জীবন আছে তা প্রমাণিত হয় আরেকবার। সেই সাথে সম্ভাবনা তৈরী হয় যে প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোন প্রাণীর কেবল ফসিল উদ্ধার নয়, হয়তো ফিরিয়ে আনা যাবে সেই প্রাণীটিকেই!!
ঘটনাটি খুলেই বলি। ২০০৭ সালের দিকে রাশিয়া, হাঙ্গেরি ও আমেরিকার একদল গবেষক সাইবেরিয়ার কলিমা নদীর তীরে বরফচাপা অবস্থায় খুঁজে পায় একটি কাঠবিড়ালি। কাঠবিড়ালির দেহটা মোটামুটি অবিকৃতই ছিলো, তীব্র ঠান্ডা পরিবেশে কাঠবিড়ালির দেহটি পঁচে গলে মাটিতে মিশে যায়নি। কাঠবিড়ালির পেট থেকে বেরিয়ে আসে এক আশ্চর্য সত্য, বেরিয়ে আসে প্রায় ৩২,০০০ বছর পূর্বে হারিয়ে যাওয়া এক গাছের ইতিহাস। কাঠবিড়ালিটি ৩২,০০০ বছর পূর্বে কোন একটি গাছের শাখা খেয়েছিলো। হয়তো কোন এক আচমকা তুষারপাতে কাঠবিড়ালিটি বরফচাপায় নিহত হয়৷ সদ্য খাওয়া গাছের শাখাটি হজম হওয়ার আগেই মৃত্যু হয় কাঠবিড়ালিটির।

সেই গাছের শাখায় ছিলো গাছটির বীজ। একটি ছিলো পরিনত যা নষ্ট হয়ে যায়, কিন্ত অন্যটি আবার ছিলো অপরিণত বীজ। রাশিয়ান গবেষকরা কাঠবিড়ালির পেট থেকে হজম না হওয়া বীজ সংগ্রহ করে সযত্নে রোপন করে। ২০১২ সালে এসে সেই বীজ থেকে চারা গজায়, গাছ হয় এবং সে গাছে আসে ফুল। ৩২,০০০ বছর পূর্বের পৃথিবীতে যে ফুল একসময় সুবাস ছড়াতো সেই ফুল ২০১২ সালে এসে আবারও এই রুক্ষ পৃথিবীকে সুভাষিত করে জানান দেয় এই পৃথিবীর মাটির নিচে চাপা রয়েছে অনেককিছু, অনেক অজানা গল্পের ইতিকথা।
রহস্যময় এই পৃথিবীর জানার পরিধি হাজার, দেড় হাজার বা দুই হাজার বছরের নয় বরং হাজার-লক্ষ-কোটি বছরের গল্প লুকিয়ে আছে এই মাটিতে। এই পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু অনেক গল্প এখনও লুকায়িত যা মাটি চিরে বেরিয়ে আসবে সময়ের আবর্তে। লক্ষ-কোটি বছরের হারিয়ে যাওয়া অনেককিছুই আবারও উঁকি দিয়ে জানান দিবে এই পৃথিবী ও তার জীববৈচিত্র্য কতটা প্রাচীণ! কতটা বিবর্তনের ভেতর দিয়ে আজকের এই পৃথিবী যেখানে হয়তো মনুষ্য প্রজাতিই সবচেয়ে নবীন বা নবীনদের মধ্যে অন্যতম।
৩২,০০০ হাজার বছর পূর্বে হারিয়ে যাওয়া যে গাছটিকে আবার পুনর্জীবিত করা হলো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছে গাছটি Silene Stenophylla প্রজাতির। এটি মূলত Caryophyllaceae পরিবারের অন্তর্গত। গাছটিকে পুনর্জীবিত করার আগ অব্দি এই প্রজাতিটি বিলুপ্ত ছিলো।
লেখা: অনিক কুমার সাহা।