শিক্ষাগুরুর ঋণ, শোধ হয় না - The Bengal Tribune
The Bengal Tribune
  • October 2, 2023
  • Last Update October 1, 2023 9:34 am
  • kolkata

দ্যা বেঙ্গল ট্রিবিউন: যার থেকে শিক্ষা লাভ করা হয়, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকা উচিত। মানুষের প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শিক্ষায় নতুন নতুন ভাবে জন্ম হয়। শিক্ষার কোন স্থান, কাল বা পাত্র নেই। সকল স্থানেই, সকল কালেই এবং যে কোন ব্যক্তির থেকেই শিক্ষা লাভ করা যায়।শিক্ষাগুরু শিক্ষকের সাথে কোন প্রকার দুর্ব্যবহার বা অকৃতজ্ঞতা করতে নেই। কথাগুলো শাস্ত্রে বহুকাল থেকেই প্রচলিত থাকলেও, সমাজে এর খুব একটা প্রতিফলন দেখতে পাই না। অকৃতজ্ঞতা বর্তমানে একটি রোগে পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে সমাজে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো বিষয়টি একটি ভয়াবহ রোগে পরিণত হয়েছে। ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ যাদের থেকে প্রতিনিয়ত শেখে, সুযোগ পেলে তাদেরই সামান্যতম অসম্মান করতে দ্বিধাবোধ করে না। বিষয়টি দুঃখজনক এবং ভয়াবহ। এই কারণে বিদ্যাও তাদের আত্তীকরণ হয় না। প্রতিনিয়ত যা শেখে, তাই আবার ভুলে যায়। বিদ্যা সাময়িক লাভ হয়, কিন্তু সে বিদ্যা দেহের মধ্যে পরিপুষ্ট হয় না। অত্রিসংহিতায় বলা হয়েছে, কোন শিক্ষা গুরু যদি শিষ্যকে এক অক্ষরের শিক্ষা প্রদান করেন, তবে তার প্রতি আমৃত্যু কৃতজ্ঞ থাকতে হয়। শ্লোকটি অত্রিসংহিতার সাথে সাথে চাণক্য শ্লোকেও পাওয়া যায়। অর্থাৎ শিক্ষাগুরুর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার বিষয়টি শাস্ত্রের একাধিক স্থানেই রয়েছে।বাল্যকালে মায়ের দুধপানের ঋণ যেমন কোনদিন শোধ হয় না; পিতার পরিপোষণের ঋণ যেমন পরিশোধ হয় না ; ঠিক তেমনি শিক্ষা গুরুর শিক্ষার ঋণ কখনো পরিশোধ হয় না। জগতে এমন কোন দ্রব্য নেই, যে গুরুর শিক্ষার সমমূল্য হিসেবে তা শিক্ষা গুরুকে প্রদান করে ঋণমুক্তি লাভ করা যায়।

একমপ্যক্ষরং যস্তু গুরুঃ শিষ্যে নিবেদয়েৎ।
পৃথিব্যাং নাস্তি তদ্‌দ্রব্যং যদ্দত্ত্বা হ্যনৃণী ভবেং ॥
একাক্ষরং প্রদাতারং যো গুরুং নাভিমন্যতে ।
শুনাং যোনিশতং গত্বা চাণ্ডালেষ্বপি জায়তে ॥
(অত্রিসংহিতা: ৯-১০)

“গুরু যদি শিষ্যকে এক অক্ষরও শিখিয়ে থাকেন, তথাপি, পৃথিবীতে এমন কোন দ্রব্য নেই, যা সেই শিক্ষা গুরুকে অর্পণ করে শিষ্য ঋণমুক্ত হতে পারে। একাক্ষরের শিক্ষা গুরুকেও যে ব্যক্তি সম্মানিত করে না, সে শতবার কুকুর হয়ে জন্ম গ্রহণ করে, পরবর্তীতে চণ্ডালত্ব প্রাপ্ত হয় বা পতিত হয়।”

একাক্ষর শিক্ষা প্রদানকারী গুরুকেও যে ব্যক্তি সম্মানিত করে না, অত্রিসংহিতায় তাকে তীব্রভাবে নিন্দা জানানো হয়েছে। সাথে এটাও বলা হয়েছে, সেই অকৃতজ্ঞ অপরাধী ব্যক্তি শতবার কুকুর জন্ম লাভ করে পরবর্তীতে চণ্ডালত্ব প্রাপ্ত হয়। এখানে চণ্ডাল বলতে কোন জাতপাত বোঝানো হয়নি। শ্লোকে চণ্ডাল বলতে পতিত ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে। শিক্ষা গুরুর প্রতি কৃতজ্ঞতাকারী সেই চণ্ডাল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র কর্মানুসারে চতুর্বর্ণের যে কোন বর্ণের হতে পারে।

কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী, সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *