আজ ১২ ই জানুয়ারি, আরো একবার মরিয়া ভাবে প্রমাণ করার দিন যে, স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন হিন্দু ধর্মের বিদ্রোহী সন্তান।
আমাদের মনে বহুকাল ধরেই ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, স্বামীজি বলেছেন গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা বেশি ভালো কিংবা ঈশ্বরে বিশ্বাস করার চেয়ে নিজের উপর বিশ্বাস করা অধিকতর শ্রেয় বা ধরুন নিজের চোখে না দেখে কোন কিছু বিশ্বাস করবে না অর্থাৎ ভগবানকে যদি চোখে না দেখা যায় তাহলে তার অস্তিত্বকে স্বীকার করা যাবে না – বিভিন্ন সময়ে স্বামীজীর মন্তব্যের এই ধরনের অপব্যাখ্যা আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। স্বামীজীর বক্তব্যের একটি অংশ পৃথিবীর সব ধর্ম সত্য এই কথা কে সামনে রেখে স্বামীজীকে প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ সাজানোর চেষ্টাও সমানতালে করে আসা হয়েছে।
আজকে স্বামীজির জন্মদিনে উনারই বলে যাওয়া কিছু কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো:
পৃথিবীর প্রত্যেক ধর্মই সত্যি মেনে নিয়েই স্বামীজি বলেছিলেন “হিন্দু তাহার সব পরিকল্পনা হয়তো কার্যে পরিণত করতে পারে নাই। কিন্তু যদি কখনো একটি সার্বজনীন ধর্মের উদ্ভব হয় তবে তাহা কখনো কোন দেশে বা কালে সীমাবদ্ধ হইবে না। যে অসীম ভগবানের বিষয় ঐ ধর্মে প্রচারিত হবে ঐ ধর্মকে তাহারই মত অসীম হইতে হইবে।” তিনি আরও বলেছিলেন “সেই ধর্মের নীতিতে কারো প্রতি বিদ্বেষ বা উৎপীড়নের স্থান থাকিবেনা। উহাতে প্রত্যেক নর-নারী দেবস্বভাব স্বীকৃত হইবে”।
তিনি আরও বলেছিলেন “সেই ধর্মের নীতিতে কারো প্রতি বিদ্বেষ বা উৎপীড়নের স্থান থাকিবেনা। উহাতে প্রত্যেক নর-নারী দেবস্বভাব স্বীকৃত হইবে”। প্রত্যেক ধর্মেই ঈশ্বর আছেন সমগ্র জগতে একথা ঘোষণা করার জন্য আমেরিকায় তার জন্য বোধ হয় সংরক্ষিত ছিল। “অশোকের ধর্ম সভা কেবল বৌদ্ধ ধর্মের জন্য হইয়াছিল। আকবর ধর্মসভা ঐ উদ্দেশ্যের নিকটবর্তী হইলেও বৈঠকে আলোচনা মাত্র” বলে স্বামীজি স্বয়ং মত প্রকাশ করেছিলেন। অর্থাৎ সমস্ত ধর্মের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি বিশ্বের মঞ্চে এই কথাই প্রচার করেছিলেন যে পৃথিবীর বুকে সার্বজনীন ধর্মের পথ শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মই দেখাতে পারে।
হিন্দু ধর্ম প্রচারে পাশ্চাত্যে এসে নিজের উপলব্ধি থেকে তিনি বলেছিলেন “পাশ্চাত্যগণের ধর্ম Inspired সুতরাং শ্বাস গ্রহণের নয় বাহির হইতে ভিতরে আসিয়াছে। আমাদের পবিত্র শাস্ত্র সমূহ কিন্তু Expired অর্থাৎ শ্বাস পরিত্যাগ এর ন্যায় ভিতর হইতে বাহির আসিয়াছে”।
ভারতবর্ষে হিন্দুদের উপর ধর্মীয় অত্যাচারের কথাও তিনি দৃঢ়কণ্ঠে তুলে ধরেছিলেন – মুসলমান আক্রমণ তরঙ্গ ভারতে আসিবার পূর্বে এদেশে ধর্মের জন্য নির্যাতন কি তাহার কেহ কখনো জানিত না। শত শত বৎসর ধরিয়া আল্লাহু আকবর রবে ভারত গগন মুখরিত হইয়াছে এবং এমন হিন্দু কেউ ছিলনা যে প্রতি মুহূর্তে নিজের বিনাশ আশঙ্কা না করিয়াছে। জগতের ইতিহাস প্রসিদ্ধ দেশগুলির মধ্যে ভারতবর্ষের সর্বাপেক্ষা বেশি অত্যাচার অনুগ্রহ সহ্য করিয়াছে তথাপি আমরা পূর্বে যেরূপ ছিলাম এখনো সেই রুপি আছি”।
প্রয়োজনে তিনি হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করতেও পিছপা হননি – “আমার দৃঢ় ধারণা- কোন ব্যক্তি বা জাতি নিজেকে সম্পূর্ণ পৃথক রেখে বাঁচতে পারে না। আর যেখানে শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা ও নীতি সম্বন্ধীয় ভ্রান্ত ধারনার বশবর্তী হয়ে এইরকম চেষ্টা করা হয়েছে, যেখানেই কোন জাতি আপনাকে পৃথক করে রেখেছে, সেখানেই তাঁর পক্ষে ফল অতিশয় শোচনীয় হয়েছে। আমার মনে হয় ভারতে অধঃপতন ও অবনতির প্রধান কারণ- জাতির চারিদিকে এইরকম আচারের বেড়া দেওয়া”।
সমালোচনা করে তিনি এই কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন “জগতে সময় সময় সমালোচনা, এমনকি কঠোর সমালোচনারও প্রয়োজন হইয়া থাকে কিন্তু সে অল্প দিনের জন্য। অনন্তকালের জন্য আছে কার্য, উন্নতির চেষ্টা। সমালোচনা বা ভাঙাচোরা নয়।”
এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে স্বামীজীর মতন মহাপুরুষকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে হিন্দু ধর্মের কঠোর সমালোচক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বাস্তবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত স্বামীজীর শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের কথাই বলে গেছেন। হিন্দু ধর্মের বীর সন্তান স্বামীজীর জন্মদিনে উনার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা রইল।
সূত্র:
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা প্রথম খন্ড।
হিন্দুধর্ম -স্বামী বিবেকানন্দ।
লেখা: রুদ্র প্রসন্ন ব্যানার্জী