অন্যান্য রাজপুত বংশীয় সম্প্রদায়ের ন্যায় গুর্জর-প্রতিহারদের উৎপত্তি নিয়েও বিস্তর বিতর্ক আছে বহুকাল ধরে।
গুর্জর-প্রতিহারদের নিজস্ব অভিলেখ ও সমসাময়িক প্রতিবেশী ও বিদেশী নথিপত্র ও সাক্ষ্য অনুসারে গুর্জর-প্রতিহাররা নাকি রঘুবংশী ক্ষত্রিয় ছিল — অর্থাৎ তারা ভগবান রামচন্দ্রের বংশধর ছিল। গোয়ালিয়র প্রশ্বস্তি অনুসারে মিহিরভোজ নাকি রামচন্দ্র নয়, তার ভাই লক্ষ্মণের প্রত্যক্ষ বংশধর ছিলেন। ঐ প্রশ্বস্তিতেই ৭ নং শ্লোকে বৎসরাজকে ‘একক্ষত্রিয়পুঙ্গব’ অর্থাৎ কিনা ক্ষত্রিয়দের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বংশের সন্তান বা ইক্ষবাকু বংশের সন্তান বলা হয়েছে।
গুর্জর-প্রতিহারদের অন্যতম শাখা মাণ্ডব্যপুর রাজ্যের শাসক বাউকের সমকালীন যোধপুর অভিলেখে স্পষ্টই বলা হয়েছে তিনি লক্ষ্মণের প্রত্যক্ষ বংশধর ছিলেন। যেহেতু রামায়ণে লক্ষ্মণকে অন্তত দুই বার ‘প্রতিহার’ বলা হয়েছে মেঘনাদ বধ অংশে, তাই গুর্জররা নিজেদের বংশকে সংক্ষেপে ‘গুর্জর-প্রতিহার’ বলত।
গুর্জর-প্রতিহারদের আরেক শাসক কক্কের ঘটিয়ালা অভিলেখেও একই কথা আছে। সমস্যা হল উক্ত অভিলেখে গুর্জর-প্রতিহার রাজবংশের শাসককে হরিশ্চন্দ্রকে ব্রাহ্মণ বলা হয়েছে। যার ক্ষত্রিয় স্ত্রী ভদ্রার গর্ভে যাদের জন্ম হয়েছিল, তারাই পরবর্তীকালে নিজেদের গুর্জর-প্রতিহার বলে পরিচয় দেওয়া শুরু করে।
কবি রাজশেখর গুর্জর-প্রতিহার শাসক মহেন্দ্রপালকে ‘রঘুকূলতিলক’ ও ‘রঘুগ্রামণী’ এবং মহীপাল ‘রঘুবংশমুক্তামণি’ ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করেছেন। বৈদিক শব্দ ‘প্রতিহার্তৃ’র অর্থ ব্রাহ্মণ উপদেষ্টা। সেজন্য অনেকে গুর্জর-প্রতিহারদের ব্রাহ্মণ কুলোদ্ভবও মনে করেন।
অনেকে মনে করেন গুর্জর-প্রতিহাররা শুরুতে ব্রাহ্মণ ছিল, পরবর্তীকালে তারা ক্ষত্রিয় হয়ে যায়। কিন্তু অধিকাংশ ইতিহাসবিদ এদের বিদেশী কুলোদ্ভব মনে করেন। কেননা এদের সম্পর্কে কোনও বৈদিক বা মৌর্য যুগীয় এমনকি গুপ্ত যুগীয় কোনও নথিপত্রে তথ্য পাওয়া যায় না। সম্ভবত এরা বিদেশ থেকে এসে শেষে ভারতীয় হয়ে গিয়েছিল।
পর্ব- ১
(চলবে)
তথ্যসূত্রঃ উত্তর ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস, বিশুদ্ধানন্দ পাঠক।
লেখা: অয়ন চক্রবর্তী।