Home - News Report - পাকিস্তান: ধ্বংসের মুখে তেল শিল্প, বৃহত্তম শোধনাগার বন্ধ
পাকিস্তানের বৃহত্তম শোধনাগার গত ৩১শে জানুয়ারী জ্বালানি মন্ত্রককে (পেট্রোলিয়াম বিভাগ) একটি চিঠি লিখে জানিয়েছিল যে, অপরিশোধিত তেলের ঘাটতি থাকার কারণে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত, শোধনাগারটি বন্ধ থাকবে। Cnergyico PK হেড অফ কনজিউমার সেলস সৈয়দ আদিল আজম চিঠিতে বলেছেন যে, শাটডাউনটি ‘অপরিশোধিত তেলের জাহাজ আসার সময়রেখা’ অনুসারে শাটডাউনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। শোধনাগারটির দৈনিক ১,৫৬,০০০ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা রয়েছে।
এক সপ্তাহ আগে, তেল কোম্পানি উপদেষ্টা পরিষদ (OCAC) তেল ও গ্যাস নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে (OGRA) একটি চিঠিতে, এই শিল্প যে সংকটের মুখোমুখি হয়েছে সে সম্পর্কে সংস্থাকে অবহিত করে। OCAC চিঠিতে বলেছে যে, এই শিল্পটি পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এবং “আমদানি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অর্থায়নের ব্যবস্থা করার জন্য” অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
পাকিস্তানি রুপির দরপতন এবং আমদানিতে এর প্রভাব উল্লেখ করে, OCAC বলেছে, “গত ১৮ মাসে তেলের দাম বৃদ্ধি এবং পাকিস্তানি রুপির ক্রমাগত দরপতনের কারণে, ব্যাংকিং খাত থেকে উপলব্ধ বাণিজ্য অর্থ সীমা অপর্যাপ্ত হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র সাম্প্রতিক দরপতনের ফলে, এলসি (letter of credit/ import) সীমা রাতারাতি ১৫-২০% সঙ্কুচিত হয়েছে।”
এতে আরও বলা করা হয়েছে, “আমাদের সদস্য কোম্পানিগুলির (Cnergyico সহ) সীমা বাড়ানোর জন্য স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের মাধ্যমে অবিলম্বে ব্যাঙ্কিং সেক্টরকে অনুরোধ করা হচ্ছে।”
পাকিস্তানের শুধুমাত্র অর্থনৈতিক অবস্থাই খারাপ ছিল না, ২০২২ সালের বন্যায় রাস্তা ও সেতু ভেসে যাওয়ায় তেল শোধনাগারে অপরিশোধিত তেল পরিবহন ব্যহত হয়। বিকল্প পথ অবলম্বন করা হলেও লোকসান বাড়তে থাকে।
Geo নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, নগদ সংকটে পড়া পাকিস্তানের সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এর নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী ডলার ক্যাপ অপসারণ করেছে। এর ফলে আন্তঃব্যাংক বাজারে পাকিস্তানি মুদ্রার ঐতিহাসিক পতন ঘটে। বর্তমানে, মার্কিন ডলার প্রতি ২৭৭.৮১ পাকিস্তানি রুপিতে লেনদেন করা হচ্ছে। ডলার ক্যাপ অপসারণের এই শর্ত, বেলআউট পুনরায় শুরু করার শর্তগুলির মধ্যে একটি ছিল। অন্যান্য শর্তের মধ্যে জ্বালানি ভর্তুকি সহজ করা সহ অন্যান্য আরও কিছু শর্ত রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের মধ্যেও সরকার কর্তৃক লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) সীমাবদ্ধ ছিল। ২৭ জানুয়ারী পর্যন্ত, পাকিস্তানের USD রিজার্ভ ছিল ৩০৮৬.২ মিলিয়নের মতো, যা দেশটির শুধুমাত্র ১৮ দিনের আমদানির জন্য যথেষ্ট হতে পারে।
জ্বালানি আমদানি পাকিস্তানের আমদানি বিলের একটি বড় অংশ। দেশটির বার্ষিক বিদ্যুতের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি চাহিদা মেটানো হয় আমদানিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হয়েছে, যা নগদ অর্থের সংকটে পড়া প্রতিবেশী দেশটিতে একটি ডমিনোস ইফেক্ট তৈরি করেছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান জ্বালানি বাঁচাতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অন্ধকারে রেখে ঘন ঘন ব্ল্যাক আউট ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক এক আদেশে, পাকিস্তান সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ব্যবসা, রেস্তোরাঁ, শপিং মল এবং ম্যারেজ প্যালেস শীঘ্রই বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এই সংকটের মধ্যে, দেশটির বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি, তাদের বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর একটি বড় ধাক্কা।