মুর্শিদাবাদের কাঠগোলা বাগানবাড়ি - The Bengal Tribune
The Bengal Tribune
  • June 6, 2023
  • Last Update April 29, 2023 5:58 pm
  • kolkata

মুর্শিদাবাদের কাঠগোলা বাগানবাড়ি- ইতিহাস ও সৌন্দর্যের মেলবন্ধন

বিদ্বজ্জনেরা বলেন মুর্শিদাবাদের ইতিহাস চর্চা করলে নাকি বাংলার কুড়ি শতাংশ ইতিহাসের চর্চা প্রায় সম্পন্ন হয়ে যায়। তাই সকল ইতিহাসপ্রেমীকে অন্তত মুর্শিদাবাদের ইতিহাস অবশ্যই চর্চা করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী মুর্শিদাবাদে ভ্রমণ এবং বহরমপুরের ছানাবড়ার স্বাদ অবশ্যই সকলের নেওয়া উচিত।

কাঠগোলা বাগান বাড়ি

ধনবান ব্যবসায়ী এবং জমিদার লছমীপৎ সিং দুগার ১৮ শতকে কাঠগোলা বাগান বাড়ি নির্মাণ করান। এটি বর্তমানে দুগার পরিবারের বাগানবাড়ি। লছমিপৎ, জগপৎ, মহীপৎ এবং ধনপৎ এই চার ভাই এই বাগান বাড়িতে বসবাস করতো। সিংহদ্বার দিয়ে বাগানে প্রবেশ করলেই বাগানের চার কোণে এই চার ভাইয়ের অশ্বারোহী মূর্তি দেখা যায়। ১৯৩৩ সালে লছমীপৎ তার মায়ের সম্মানার্থে বাগানের ভেতরে জৈন মন্দিরটি নির্মাণ করেন। বহু ব্রিটিশ পদাধিকারী, দেশীয় রাজ পুরুষ, বিখ্যাত এবং প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব, মুর্শিদাবাদের নবাব এবং অভিজাতরা নিয়মিত এই বাগান বাড়ির জলসায় আমন্ত্রিত হতেন।

এই পরিবারের একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হলেন শ্রীপৎ সিং। তিনি ঐতিহ্যবাহী জিয়াগঞ্জ কলেজ এবং ভবনের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্মাতা। আরও অনেক অগ্রগণ্য জনকল্যাণ কাজে এই পরিবারের অবদান আছে।

শোনা যায় যখনই বাগানবাড়ি নির্মাণ হচ্ছিল তখন নবাবের কানে হাওয়া ভাষায় একটি কথা পৌঁছায়। নবাবকে অপমান এবং টেক্কা দেওয়ার জন্য লছমীপৎ ও তার পরিবার এই বাগানবাড়ির নির্মাণ করছেন। ক্রোধান্বিত হয়ে নবাব সেই বাগানবাড়ি ভেঙে ফেলার আদেশ দেন। নবাবের বিশ্বস্ত অনুচর ও সিপাহীরা যখন বাগানবাড়ি ভেঙে ফেলার জন্য সেখানে উপস্থিত হন সিং পরিবার তাদের সামনে রুখে দাঁড়ান। ধনবান সিং পরিবারের সামনে সিপাহীরা তর্ক এবং প্রতিপত্তির সামনে টিকতে না পারায় তারা নবাবের কাছে ফিরে যান। এরপর স্বয়ং নবাব কাঠগোলা বাগানবাড়িতে আসেন এবং নিজের চোখের সামনে ভেঙে ফেলা নির্দেশ দেন। সিং পরিবারের সদস্যরা নবাবকে বুঝিয়ে এবং আতিথেয়তায় প্রসন্ন করে বলেন এই বাগান স্বয়ং নবাবের, তিনি তার নিজের বাগান যদি ভেঙে ফেলতে চান সেটা তার স্বয়ং ইচ্ছা।

নবাবের রাগ কমলে তিনি ভেবেচিন্তে পুরো বাগানবাড়ি নয় প্রবেশদ্বারের তোরনের উপর দুটি সিংহের মধ্যে একটিকে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। কারণ নবাবের মুখ থেকে যখন আদেশ বেরিয়ে গেছে তার সে আদেশের সম্মান রক্ষার্থে স্বয়ং নবাব এই নির্দেশ দেন সিপাহীদের। লক্ষণীয়, স্বাধীনতার পর এত সময় পর্যন্ত এখনো সেই সিংহের পুনঃপ্রতিস্থাপন করা হয়নি। হয়তো ইতিহাসকে স্মরণ করার জন্য সেই কাজ করা হয়নি।

বাগানবাড়ির পুকুর, জলসাঘর, জৈন মন্দির, বাগানের মধ্যে সুবৃহৎ ফল গাছ, নাট্য মঞ্চ, গুপ্ত সুরঙ্গ,চিড়িয়াখানা, অপ্রাকৃতিক কৃত্রিম ঝর্ণা, মার্বেলের পশুপাখি এবং মানব মূর্তি সবকিছু মিলিয়ে দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে উপভোগ করার মত মনোরম দৃশ্য।

ভেতরে ঢুকলে প্রথমে যেটি লক্ষ্য করা যায় সেটি হল লোহার রেলিং দেওয়া কাঠের সিঁড়ি প্রায় চার তলা পর্যন্ত উঠে গেছে নীচ থেকে। বহু মার্বেলের মূর্তি, মূল্যবান আসবাবপত্র, দোতলা এবং একতলায় সুবৃহৎ বসার ঘর, বিলিয়ার্ড রুম, খাবার ঘর, বৃহৎ পালঙ্ক যুক্ত স্বয়ং কক্ষ, জমিদারের বৈঠকখানা সহ আরও অনেক দৃষ্টিনন্দন মূল্যবান জিনিস রয়েছে। এই বাগানবাড়িতে বিখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র “এক যে ছিল রাজা” -র শুটিং করা হয়েছিল।

চিত্র সংগ্রহ ও লেখা: M Rahul Mondal

তথ্যসূত্রঃ
মুর্শিদাবাদ পরিচয় – সুপ্রভা চক্রবর্তী

কথা ও কাহিনীতে মুর্শিদাবাদ – রবীন্দ্রনাথ দাস

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *