Home - ইতিহাস - নেতাজীকে “তোজোর কুকুর” বলা কমিউনিস্ট পার্টির ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার
আজ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী। এই বিশেষ দিনে কিছু ইতিহাস কালের আবর্তে ফিরে আসে বারবার। ইতিহাস বলার চেয়ে সেগুলোকে চাপিয়ে দিতে চাওয়া সত্য বললেই বেশি ভালো হয়। অন্তর্জাল ও বিভিন্ন বইয়ের কল্যাণে কিছু পোস্টার খুঁজে পাওয়া যায়, যা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র “পিপলস ওয়ার”-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্রে নেতাজীকে নিয়ে প্রকাশিত কুৎসা।
ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সেই সময়ের মুখপত্রের নাম ছিল “পিপলস ওয়ার”। ১৯৪২ সালের ১৯ শে জুলাই তারিখে, এই মুখপত্রের দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথম পৃষ্ঠায় একটা কার্টুন প্রকাশিত হয়েছিল যাতে দেখা যায় যে জাপানী প্রধানমন্ত্রী তোজোর হাতে একটি দড়ি, যাতে বাঁধা রয়েছে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু।
কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ওয়ারে নেতাজীকে নিয়ে প্রকাশিত কুৎসা।
সিপিআই পার্টির ইতিহাসবিদ কমিউনিস্ট জি অধিকারী ‘পিপলস ওয়ার’ পত্রিকায় লিখেছিলেন, ” হিটলার সুভাষ বসুকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজোর কাছে পাঠিয়েছে, তোজো সুভাষকে ‘দেশগৌরবী’ বানিয়েছে, ভারতীয় সেনার চীফ কম্যান্ডার বানিয়েছে। বোস রোজ সিঙ্গাপুর রেডিওতে চিৎকার করছে। হিটলার, তোজো আর সুভাষ বোসের ষড়যন্ত্র আমাদের কাছে সম্পূর্ণ পরিষ্কার। আমরা আমাদের ভাই চীনের স্বার্থে এই চক্রান্ত ধ্বংস করবো। “
এছাড়াও, “পিপলস ওয়ার” এ বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন কার্টুনে নেতাজীকে কখনও বা হিটলারের সঙ্গী গোয়েবলস এর হাতে পোষ্য বিড়াল হিসেবে, কখনও বা তোজোর কুকুর হিসেবে দেখিয়েছিল এই কমিউনিস্ট পার্টি। তৎকালীন বাম নেতাদের অনেকেই প্রকাশ্য জনসভায় নেতাজীকে তোজোর কুকুর বলতেন এবং সেই নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিখ্যাত বাম নেতা জ্যোতি বসু।
কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ওয়ারে নেতাজীকে নিয়ে প্রকাশিত কুৎসা।
১৩ ই সেপ্টেম্বর ১৯৪২ সালে ‘পিপলস ওয়ার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় আরও একটি কার্টুন যেখানে এস জি সরদেশাই এর নেতাজীর বিরুদ্ধে একটি লম্বা বিবৃতি প্রকাশ করা হয়৷ INA যখন মনিপুরে ব্রিটিশ সেনাকে পরাজিত করে ভারতের দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করেছিল, তখন জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, “যদি সুভাষ বহিরাগত সেনা নিয়ে দেশে প্রবেশ করে, তবে আমিই সর্বপ্রথম তার বিরুদ্ধে খোলা তরবারি নিয়ে বিরোধিতা করবো।”
নেতাজীর জন্মদিনে আজ সকলেই কমবেশী নেতাজীর প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবে। আবার অনেকে হাহাকার ও আফসোস করে থাকি যে নেতাজী কেন ফিরে এলেন না দেশে! উপরোক্ত ইতিহাস থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, স্বদেশী বিশ্বাসঘাতকদের কর্মকাণ্ডে হয়তো ফিরে আসা নিয়ে অভিমান জমেছিল নেতাজীর মনে। অন্যদিকে আজকের দিনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বামপন্থীরা বিভিন্ন ইস্যুতে নেতাজীকে “বামপন্থী” হিসেবে উপস্থাপন ও প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু, বাস্তবে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর বিরোধিতা ও তাঁর নামে মিথ্যাচারের শিখরে ছিল স্বয়ং কমিউনিস্ট পার্টি এবং বামপন্থীরা, যা ইতিহাস থেকে কখনও মুছে যায়নি।