Home - আন্তর্জাতিক - এই প্রথম পাকিস্তানকে সিন্ধু জল চুক্তি সংশোধনের জন্য ভারতের নোটিশ
ভারত সিন্ধু জল চুক্তি সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে পাকিস্তানকে একটি নোটিশ পাঠিয়েছে, যদিও চুক্তিটির বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া গত ৫ বছর ধরে আটকে রয়েছে। ১৯৬০ সালে করাচিতে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির সংশোধনের জন্য নয়াদিল্লি প্রথমবারের মতো ইসলামাবাদকে আহ্বান জানিয়েছে।
WION এর রিপোর্ট অনুযায়ী, “ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তিটি (IWT) সংশোধনের জন্য পাকিস্তানকে নোটিশ জারি করেছে৷ এটি IWT-এর ধারা XII (3) অনুসারে, সিন্ধু জল চুক্তিতে পাকিস্তানের সরাসরি হস্তক্ষেপ, ভারতকে চুক্তি পরিবর্তনের নোটিশ ইস্যু করতে বাধ্য করেছে।”
নোটিশের অধীনে, ভারত পাকিস্তানকে ৯০ দিনের মধ্যে চুক্তির “বস্তুগত লঙ্ঘন সংশোধন করতে” এবং “গত ৬২ বছরে শেখা পাঠ ও অভিজ্ঞতাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চুক্তিটি আপডেট করার জন্য ৯০ দিনের মধ্যে আন্তঃসরকারি আলোচনায় প্রবেশ করার আহ্বান জানিয়েছে।”
১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জল চুক্তির অধীনে, ৩টি পূর্ব নদীর জল – সুতলেজ, বিয়াস এবং রাভি নদীর জল অবাধ ব্যবহারের জন্য ভারতকে বরাদ্দ করা হয় এবং অন্যদিকে ৩টি পশ্চিমের নদী – সিন্ধু, ঝিলাম এবং চেনাবের জল পাকিস্তানে যায়। অতিরিক্তভাবে, নকশা ও নির্দিষ্ট মানদণ্ডের সাপেক্ষে ৩টি পশ্চিমী নদীতে নদী প্রকল্পের মাধ্যমে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করার অধিকার রয়েছে ভারতের। চুক্তিটির অধীনে, পাকিস্তান পশ্চিমা নদীতে ভারতীয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নকশা নিয়ে প্রযুক্তিগত আপত্তি তুলতে পারে। চুক্তিতে পাকিস্তানের জন্য এই অধিকার রাখার বিষয়টিকে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর রাজনৈতিক ব্লান্ডার হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা, যার ফলাফলস্বরূপ ভারতকে এখন এই চুক্তিটি নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
মূল বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম হল বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া, যা ভারতকে নোটিশ জারি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৫ সালে, পাকিস্তান ভারতের কিষেণগঙ্গা এবং রাটলে হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রকল্প (HEPs) এর প্রযুক্তিগত আপত্তিগুলি পরীক্ষা করার জন্য একটি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের জন্য অনুরোধ করেছিল।
পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৬, পাকিস্তান একতরফাভাবে “নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ” প্রক্রিয়া থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং তাদের আপত্তির বিষয়ে একটি “সালিশি আদালত”-কে (Court of Arbitration) সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এদিকে, ভারত বিষয়টি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানোর জন্য আলাদাভাবে অনুরোধ করেছে। একই ইস্যুতে দুটি যুগপৎ প্রক্রিয়ার সূচনা, মূলত একটি আইনি সমস্যা তৈরি করে।
WION এর রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায়, “পাকিস্তানের ক্রমাগত পীড়াপীড়িতে, বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ এবং আদালতের সালিশি প্রক্রিয়া, উভয়ের উপর পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। একই বিষয়ের ওপর এই ধরনের সমান্তরাল বিবেচনা চুক্তির কোন বিধানের অধীনে অন্তর্ভুক্ত নয়” এবং ” চুক্তির বিধান লঙ্ঘনের মুখোমুখি হওয়ার কারণে ভারত চুক্তিটি সংশোধনের নোটিশ জারি করতে বাধ্য হয়েছে।” ২০১৬ সালে, বিশ্বব্যাংক দুটি সমান্তরাল প্রক্রিয়ার সূচনা থেকে “বিরতি” নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভারত ও পাকিস্তানকে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ উপায় খুঁজে বের করার অনুরোধ জানায়।
এরপর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি পারস্পরিকভাবে সম্মত উপায় খুঁজে বের করার জন্য ভারতের বারবার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, পাকিস্তান ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী সিন্ধু কমিশনের পাঁচটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকার করে। শেষ সিন্ধু জল আলোচনায়, ভারতের সিন্ধু জল কমিশনার এ.কে পাল এবং পাকিস্তানের মেহের আলী শাহের বৈঠক হয়েছিল দিল্লিতে। সিন্ধু জল কমিশনের পরবর্তী বৈঠক হবে পাকিস্তানে।