দিল্লীতে নাকি ১০ লাখ বাঙালী থাকে। দিল্লীর সব চেয়ে পুরোনো দুর্গাপূজা হয় ১৮২৪ সালে, যদিও তা স্থায়ী হয়নি।
এমনই এক সময় আগ্রা থেকে গরুর গাড়িতে করে এক বাঙালী ডাক্তার এলেন দিল্লী। সালটা ১৮৭৯। প্রথমদিকে তার রোগীদের মধ্যে ছিল কলকাতা দিল্লী রেল লাইনে কর্মরত রেলের মানুষজন। পরের দিকে গোটা দিল্লীর সব চেয়ে নামী ডাক্তার হয়ে যান তিনি। নাম হেম চন্দ্র সেন।
বাঙালীকে ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করার অন্যতম পথপ্রদর্শক ছিলেন ডাক্তার হেম চন্দ্র সেন।
১৮৮৩ সালে স্থাপনা করেন ইম্পিরিয়াল মেডিক্যাল হল। সেকালের বাঙালী ব্যবসাকে খারাপ চোখে দেখত না। ডঃ সেন নিজের চেম্বারের পাশেই গড়ে তুললেন একটি টাইপ সেটিং ইউনিট। এমনকি একটা ওষুধ দোকান ও শুরু করলেন, নাম দিলেন এইচ সি সেন এন্ড কম্পানি। কলকাতা থেকে এলোপ্যাথিক ওষুধ সাপ্লাই করতেন দিল্লীতে।
ডাক্তার হেম চন্দ্র সেন। (ছবি কৃতজ্ঞতা: অভিষেক ভৌমিক)
ভোর ৪ টেয় উঠে রোগী দেখা শুরু করতেন, চলত রাত অবধি। মানুষ বলত সেন ডাক্তারের হাতে জাদু আছে। দিল্লীর হিন্দু কলেজের প্রথম গভর্নিং বডিতেও ছিলেন তিনি।
দিল্লিতে ঘুরতে গেলে তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী প্রমুখ। এমনকি তাঁর মৃত্যুতে গোটা চাঁদনিচক বন্ধ হয়ে যায় এক সপ্তাহের জন্য, এমন ছিল তাঁর পরিচিতি।
ওনার সেই ওষুধ দোকান এখনো সেই সেন বংশের হাতেই আছে। দিল্লীতে তাঁরা এখনো সম্মানিত।
কিন্তু এত খাটনি তার সইল না। ১৯০৬ সালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে চলে গেলেন পরলোকে। ওনার পরে ওনার ডাক্তারী ব্যবসা আগে নিয়ে যান ওনার পুত্র ডঃ বি সি সেন ও ডঃ আর বি সেন। ওনার বংশধর হলেন সিবিআইয়ের প্রাক্তন ডিরেক্টর শ্রী শান্তনু সেন।
লেখা: অভিষেক ভৌমিক, হিজিবিজি।